Welcome to my information site

Best information site

Sunday 6 January 2013

মাহমুদুর রহমান সময়ের সাহসী সন্তান

মাহমুদুর রহমান সময়ের সাহসী সন্তান


মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশে একটি আলোড়িত ও আলোকিত নাম। সংবাদপত্র জগতের কিংবদন্তি। বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এক অকুতোভয় নির্ভীক সিপাহসালার। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক কলমসৈনিক। তিনি আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। গত ১৩ ডিসেম্বর, ২০১২ তার বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তিনি আদালতে অগ্রিম জামিনের আবেদনও করেছেন। তার অপরাধ, গত ৮ থেকে ১২ ডিসেম্বর, ২০১২ পর্যন্ত দৈনিক আমার দেশ-এ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও বেলজিয়াম প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছে, যা নাকি কঠিন রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অপরাধ। এ মামলার আগে গত ১২ ডিসেম্বর, ২০১২ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন প্রকাশের ওপর জারি করে নিষেধাজ্ঞা। একইসঙ্গে এই সংলাপ প্রকাশের দায়ে আমার দেশ সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে গ্রেফতারের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানাতে বলেন। মাহমুদুর রহমান এখন পত্রিকা অফিসে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তার কথা হলো, তাকে গ্রেফতার করতে হলে পত্রিকা অফিস থেকেই গ্রেফতার করতে হবে।
উল্লেখ্য, বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে প্রবাসী আইন বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপ এবং ই-মেইল সব ধরনের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আদেশে বলা হয়েছে, ‘কারো ইন্টারনেট বা ই-মেইল হ্যাক করা বা ব্যক্তিগত কথোপকথন অবৈধ উপায়ে রেকর্ড করা অন্যায়, এটা জেনেও তা প্রচার করা আরো বড় অপরাধ। এটি ট্রাইব্যুনালের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করা এবং বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল।’ (সূত্র : সম্পাদকীয় দৈনিক দিনকাল, তাং-১৫-১২-২০১২)
এই স্কাইপ কথোপকথন সংবাদপত্রে প্রচার করাটা যুদ্ধাপরাধের মামলাকে বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্ত অভিহিত করে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, এ মামলাকে বিলম্বিত করার চেষ্টা যারা করেছে, তারা সফলকাম হয়নি। যতরকম কৌশল আছে, সবরকম কৌশল আসামিপক্ষের আইনজীবীরা করেছেন। বিচারক নিজামুল হক নাসিমের সঙ্গে আহমেদ জিয়াউদ্দিনের অভিজ্ঞতার বিনিময় হয়েছে বা পরামর্শ হয়েছে—সেটি সত্যি। যেহেতু যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং এই ট্রায়াল আমাদের বিচারক, আইনজীবী ও আসামিদের জন্য একেবারে নতুন। তাই নাসিম সাহেব একজন বিচারক হিসেবে আহমেদ জিয়াউদ্দিন যেহেতু সে বিষয়ে অভিজ্ঞ, তার সঙ্গে শেয়ার করতেই পারেন বা তার সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতেই পারেন। এটি দোষের কিছুই নয়। তবে প্রথম থেকে আমরা অনুসন্ধান করছি দীর্ঘদিন ধরে তারা কথা বলে যাচ্ছেন আর আমার দেশ পত্রিকা বা ইকোনমিস্ট পত্রিকা এই তথ্য ধারাবাহিকভাবে সংগ্রহ করছে—এ বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। (সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, তাং ১৫-১২-২০১২, পৃ. ৩)
দৈনিক আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিক। অনেকের মতে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। আদালত কেন এ বিষয়টি নিয়ে এত বেশি উত্সাহ দেখাচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। (সূত্র : দৈনিক দিনকাল, তাং ১৫-১২-২০১২)
উল্লেখ্য, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন দৈনিক আমার দেশ-এ প্রকাশের পর সারাদেশে বিচারকের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং সংশ্লিষ্ট বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের দাবি ওঠে। এক পর্যায়ে বিতর্কের মুখে স্কাইপ কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ১১-১২-২০১২ তারিখে পদত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আসিফ নজরুলের ভাষায়, ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইন্টারনেট স্কাইপে তৃতীয়পক্ষের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতির সংলাপ বিচারকের আচরণবিধির লঙ্ঘন। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে একজন বিচারপতি অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে পারেন না। কিন্তু তিনি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তৃতীয়পক্ষের সঙ্গে যেসব কথা বলেছেন, তাতে বিভিন্ন দিক থেকে বিচার কাজ প্রভাবিত করার বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিচার প্রক্রিয়া, বিশেষ করে যে কেসের ব্যাপারে তারা কথা বলেছেন—সেটি চ্যালেঞ্জে পড়েছে এবং এর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এছাড়া তিনি ট্রাইব্যুনালের অন্য একজন বিচারপতিকে ‘করাপ্টেড’ বলেছেন, যা ওই বিচারকের গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন তুলেছে।’ (সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, তাং ১১-১২-২০১২, পৃ.৩)
ধারণা করা হচ্ছে, সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথনের রেকর্ড লন্ডনে দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকার কাছে রয়েছে। ওই কথোপকথন ইউটিউবে ছাড়া হয় এবং দ্য ইকোনমিস্ট-এর অনলাইনেও ছাপা হয়। একজন বিচারপতি যখন শপথ ভঙ্গ করে বিচার চলাকালীন মামলা ও মামলার রায় কী হতে পারে—তা নিয়ে অন্যের সঙ্গে স্কাইপ করেন, তখন বলা যায়—বিচারের আসনে বসে এটা বিচারের সঙ্গেই অসদাচরণ করা। আর সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে সাংবাদিকদের কাজ। তাছাড়া কোনো সংবাদ যখন জনসম্পৃক্ত থাকে, কেউ যদি সংবিধানের শপথ ভঙ্গ করে থাকেন, কেউ যদি আইনকে ব্যবহার করতে চান অন্যকে শায়েস্তা করার কাজে, তখন এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কারণ তথ্য অধিকার আইন ও ২০১১ সালের ৭ নং আইনের শিরোনাম হচ্ছে ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ সুরক্ষার আইন’। এ আইনে তথ্য প্রকাশকারীর যাবতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ হাইকোর্ট রুল জারি করে তথ্য অধিকার আইনকে অবজ্ঞা করেছে। এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। এই বিশ্বায়নের যুগে মিডিয়া অনেক শক্তিশালী। পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোও এখন মিডিয়াকে গুরুত্ব দেয়। অথচ বাংলাদেশে মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। (সূত্র : দৈনিক দিনকাল, তাং ১৫-১২-২০১২, পৃ.৪)
বেলজিয়াম প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ সংলাপে উচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারপতির নামও এসেছে। এর মধ্যে বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের নামও আছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন আর তা হলো—বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে দেশের আইনজীবী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন মহলে, এমনকি জাতীয় সংসদে আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে দৈনিক আমার দেশ এর আগে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বিচারপতি তথ্য গোপন করে লন্ডনে বাড়ি ক্রয়সহ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। পরে মাহমুদুর রহমান বিচারপতির বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ১৯টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে তাকে অভিশংসনের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন জানান। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। গত ৮ নভেম্বর, ২০১২ বঙ্গভবন থেকে চিঠি দিয়ে এই উদ্যোগের কথা মাহমুদুর রহমানকে জানানো হয়। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদকের অভিযোগ নিষ্পত্তি চলাকালেই বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বেঞ্চ থেকে আমার দেশ পত্রিকার বিষয়ে রুল জারি করা হলো। অর্থাত্ অভিযুক্ত ব্যক্তিই হয়ে গেলেন বিচারক। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের ভাষায়, ‘একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তির যদি আগেই অভিযোগ থাকে, তাহলে ওই বিচারপতি অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো মামলা শুনতে পারেন না।’ এছাড়া এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদের ভাষ্য, ‘আজ স্বাধীনতার ৪১ বছর পর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সত্য কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশের একজন সাহসী বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে সংবাদপত্রের একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে এই বিজয়ের মাসে ব্যবস্থা গ্রহণ (মামলা দায়ের) জাতীয় পর্যায়ে অত্যন্ত একটি লজ্জাকর ব্যাপার। মানুষ এটাকে ভালোভাবে গ্রহণ করবে না। সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের অর্থ গণতন্ত্রের আয়ু ফুরিয়ে আসা। গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে এ ধরনের পদক্ষেপ কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ এছাড়া বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদের ভাষায়, সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও সংবাদপত্র তার সূত্র জানাতে বাধ্য না হলেও এখানে সূত্র জানানো বাধ্য করতে চেষ্টা হয়েছে। বিশিষ্ট চিকিত্সক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এজেডএম জাহিদ হোসেনের ভাষায়, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে সরকার মানুষকে সত্য জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। (সূত্র : দৈনিক দিনকাল, তাং ১৫-১২-২০১২)
বিচারপতি নিজামুল হক ও প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের মতো একটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের শাসনামলে—যা ইতিহাসে ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ নামে খ্যাত। ফলশ্রুতিতে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করতে হয় নিক্সনকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই তথ্য ফাঁস করে দেয়ার (অপরাধে!) জন্য সংশ্লিষ্ট ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো বিচার বা মামলা হয়নি। বন্ধ হয়নি পত্রিকাটিও। উপরন্তু এই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনা আবিষ্কার এবং তা দেশবাসীর সামনে সাহসের সঙ্গে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টেইন ও বব উডওয়ার্ড রাতারাতি আমেরিকার জাতীয় বীরে পরিণত হন এবং সে বছর সাংবাদিকতায় নোবেল বলে পরিচিত বিখ্যাত ‘পুলিত্সার’ পুরস্কারে ভূষিত হন (সূত্র : আমার দেশ, তাং ১৬-১২-২০১২)। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, একইরকম ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরস্কার পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো আমার দেশ এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি নিজে আজ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এটি জাতি ও সাংবাদিক জগতের জন্য চরম লজ্জাজনক এবং গণতন্ত্রের চরম পরিপন্থী।
বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের ভাষায়, ‘...আমার দেশ এরকম একটি অভাবনীয় কাজ করে একটা জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছে। সাংবাদিকতার জগতে একটি নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। এজন্য সম্পাদক মাহমুদুর রহমান শ্রেষ্ঠ সাহসী সম্পাদকের খেতাব পেতে পারেন। স্কাইপে ন্যক্কারজনক কথোপকথন জনসম্মুখে প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান জাতির শ্রেষ্ঠ সেবকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাই আমরা তাকে নোবেল না দিতে পারলেও স্বাধীনতা পুরস্কার অবশ্যই দিতে পারি।’ (সূত্র : আমার দেশ, তাং ২৪-১২-২০১২)
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান হিসেবে বিচারপতি নিজামুল হকের ওপর অর্পিত হয়েছিল জাতির গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দায়িত্ব। ট্রাইব্যুনালের বিচার স্বচ্ছ, ন্যায্য, নিরপেক্ষ, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও সবার কাছে গ্রহণীয় হোক—এটি সবার দাবি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিজামুল হক ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান হিসেবে তার দায়দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি (সূত্র : সম্পাদকীয়, দৈনিক ইনকিলাব, তাং ১৩-১২-২০১২)। এতে উচ্চ আদালতের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। একইসঙ্গে আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় ও রায় প্রদানে স্বচ্ছতা নিয়ে দেশবাসীর মনে প্রশ্ন ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
এটি স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতে মাহমুদুর রহমান একজন কিংবদন্তি। তিনি সত্, সাহসী ও নির্ভীক কলমসৈনিক। সময়ের সাহসী সন্তান। গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। বলিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক দেশপ্রেমিক শ্রেষ্ঠ সাহসী সম্পাদক। দেশপ্রেম ও সততার প্রতীক মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের অহঙ্কার। তার কাছে সবার ওপরে দেশের স্বাধীনতা, দেশের মানুষ ও নাগরিক অধিকার। বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষায় তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এছাড়া সব সরকারের দুঃশাসন ও অপশাসনের বিরুদ্ধে তিনি সদা সোচ্চার। তিনি বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক নির্ভীক প্রতিবাদী কণ্ঠ। তিনি সত্য ও ন্যায়ের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে, এমনকি হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত। তার ভাষায়, প্রয়োজনে তিনি জীবন দেবেন, তবুও সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে সরে আসবেন না। বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সত্য প্রকাশ থেকে তিনি পিছপা বা বিরত হবেন না। মহান আল্লার ওপর তার অগাধ বিশ্বাস। তিনি ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বলেছিলেন, ‘মামলা দিয়ে আমার দেশ পত্রিকার কণ্ঠরোধ করা যাবে না। ২৪টি মামলা হয়েছে। তাতে কি হয়েছে? ২৪ হাজার মামলা হলেও দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ সত্য থেকে পিছপা হবার পাত্র আমার দেশ নয়। (সূত্র : আমার দেশ, তাং ০৫-০২-২০১০)
তাই তো কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় বলতে হয়—‘সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়; জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।’
দেশের মানুষ যে মুহূর্তে একদলীয় শাসনের নাগপাশ থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ ও ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন কর’ আন্দোলনে শরিক, তখন বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়। যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। দেশবাসী তাই আজ এই মামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার ও ক্ষুব্ধ।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের পদত্যাগ প্রমাণ করে যে, ট্রাইব্যুনালের বিষয় নিয়ে স্কাইপ সংলাপ বা কথোপকথনের যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে—তা সঠিক এবং এটি একজন বিচারকের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট বিচারপতির স্কাইপ কথোপকথনের বিষয়ে কোনো তদন্ত না করে উল্টো আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করাটা জনগণ ভালো চোখে দেখছে না এবং এটাই স্বাভাবিক। এর ফলে একদিকে আদালতের ওপর মানুষের আস্থা কমে আসবে, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। পাশাপাশি এই মামলা রুজুর কারণে বর্তমান সরকারের ভাবমর্যাদাও দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। যা সরকারের জন্যও মঙ্গলজনক নয়। কারণ গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে এ ধরনের পদক্ষেপ (মামলা) কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই দেশবাসীর প্রত্যাশা সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপ (মামলা) গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে এবং দেশে গণতন্ত্রের ধারাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

লেখক : প্রফেসর, ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Saturday 1 December 2012

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যত কেলেঙ্কারি:

ওয়াটারগেট:
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদর দফতর ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট নামক স্থানে। ১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ওই সদর দফতরেই ডেমোক্র্যাটিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা, পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আলাপ-আলোচনা করা হতো। কালীন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিঙ্ন। আর ডেমোক্র্যাটদের সব নির্বাচনী পরিকল্পনা নিঙ্ন তার সহযোগীরা আড়ি পেতে শোনা এবং টেপ করে নেওয়ার যে নোংরা পদ্ধতি অবলম্বন করে তা পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যায়। এতে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ শুরু হয়। সবাই এমন কীর্তির জন্য প্রেসিডেন্ট নিঙ্নের তীব্র সমালোচনা করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৪ সালের আগস্ট নিঙ্ন প্রেসিডেন্টের পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ভিয়েতনাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তিপ্রচেষ্টা এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নসহ আরও অনেক সাফল্যজনক কাজ থাকলেও এই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিঙ্নের রাজনৈতিক জীবনের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে রয়ে যায়। তবে ঘটনার ৩৬ বছর পর এবং মৃত্যুর ১৭ বছর পর এই কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি। ইতিহাসবেত্তা স্ট্যানলি কাটলারের এক অনুরোধে বিচারক রইস ল্যামবার্থ বহুল আলোচিত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিঙ্নের দেওয়া সাক্ষ্যের নথিপত্র প্রকাশ না করায় নিঙ্নকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন ওই বিচারক।

মনিকাগেট:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আলোচিত নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়।

উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট। তিনি বর্তমান ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বামী। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে মনিকা লিউনস্কির বয়স যখন ২২ বছর তখন ক্লিনটনের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের প্রেম বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে।

প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের কর্মচারী মনিকা লিউনস্কির রসালো প্রেম কাহিনী জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই নড়েচড়ে বসেন। কারণ ওটাই ছিল ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের এরকম নারী কেলেঙ্কারির প্রথম ঘটনা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি যা করেছেন তা যদিও বেআইনি নয়। কেননা লিউনস্কি প্রাপ্তবয়স্কা। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মহিলার সম্পর্ক হয়ে উঠতেই পারে। ক্লিনটনের বিষয়টি যতটা না ছিল স্ক্যান্ডাল, তার চেয়ে অনেক বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে রাজনৈতিক চড়াই-উতরাইয়ে যতটা না বেগ পেতে হয়েছে, সে রকমটা হয়নি সাধারণ মানুষের বেলায়। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন জনগণ ছিল ক্লিনটনের প্রতি দারুণ সহানুভূতিশীল। কারণ সে সময় মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা ছিল খুবই ভালো এবং বেকারত্বের হার ছিল নূ্যনতম পর্যায়ে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে একটা পজিটিভ রেসপন্স আদায় করে নিতে পেরেছিলেন ক্লিনটন।

১৯৯৫ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চাকরি পায় লুইস এবং ক্লার্ক কলেজ গ্র্যাজুয়েট সুন্দরী মনিকা লিউনস্কি। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তখন সপরিবারে এই রাজকীয় প্রাসাদে বাস করতেন। ২২ বছরের সুন্দরী মনিকার সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যেই সখ্য গড়ে ওঠে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গভীর প্রণয় চলাকালে মনিকা এবং ক্লিনটন নিয়মিত অভিসারে মিলিত হতেন। তাদের প্রেম এতটাই রসালো ছিল যে তারা হোয়াইট হাউসেই বার গোপন অভিসারে লিপ্ত হন। তার চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এর মধ্যে পাঁচবার রকম অভিসারের সময় ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন হোয়াইট হাউসেই ছিলেন। কিন্তু তাদের অভিসারের খবর হিলারি তো দূরের কথা কাকপক্ষীও টের পায়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরির সুবাদে মনিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার সহকর্মী লিন্ডা ট্রিপের। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে মনিকা তার বিশ্বস্ত বন্ধু সহকর্মী লিন্ডাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার গোপন অভিসারের কথা জানান। ট্রিপ মনিকাকে সংক্রান্ত প্রমাণ ধরে রাখতে নানা পরামর্শ দেন। এখানেই ভুলটা করে বসেন মনিকা। গোপন কথা গোপনই রাখতে হয়।

এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে ড্রাজ রিপোর্ট ওয়েবসাইটে। বছরেরই ২১ জানুয়ারি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। উপায়ান্তর না দেখে ক্লিনটন স্ত্রী হিলারিকে সঙ্গে নিয়ে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে সব অস্বীকার করেন। মনিকাও দাবি করেন যে ঘটনা মিথ্যা এবং ট্রিপ ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। এদিকে ট্রিপের কাছে মনিকা এবং ক্লিনটনের প্রেমালাপের গোপন টেপ সংরক্ষিত ছিল। বাধ্য হয়ে ট্রিপ সেটা তদন্ত কর্মকর্তা কেনেথ স্টারকে প্রদান করেন। কেনেথ এটি পরীক্ষা করে বলেন, ঘটনা সত্য। অন্যদিকে নিরুপায় হয়ে মনিকা গ্র্যান্ড জুরির কাছে তার সঙ্গে ক্লিনটনের শারীরিক সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেন এবং তার কাছে সংরক্ষিত নীল বস্ত্র তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রদান করেন। তদন্ত কর্মকর্তা এই নীল বস্ত্র পরীক্ষা করে বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য এবং ক্লিনটনের দাবি মিথ্যা। অতঃপর বিচারক সুসান ডি ওয়েবার মিথ্যা কথা বলার জন্য প্রেসিডেন্টকে ৯০ হাজার ডলার জরিমানা করেন।

ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর সিনেট সদস্যরা প্রেসিডেন্টের নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে ইমপিচমেন্টের দাবি করেন। ক্লিনটনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক সদস্য বিরোধী রিপাবলিকানরা দাবি সমর্থন করেন। ফলে সিনেটে বিষয়ে ২১ দিন ধরে তুমুল বিতর্ক হয়। অবশেষে ভোটাভুটিতে ক্লিনটন জয় লাভ করেন। অর্থা যাত্রায় প্রেসিডেন্ট ইমপিচমেন্টের হাত থেকে রক্ষা পান। হিলারি ক্লিনটন পুরো ঘটনায় স্বামীর পাশে থেকে স্বামীর মনোবল জোগান। পুরো ঘটনাটি মার্কিন ইতিহাসে মনিকাগেট কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত।

টিপট গম্বুজ:
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের আরেকটি কেলেঙ্কারি ছিল টিপট গম্বুজ শীর্ষক স্ক্যান্ডালটি। এটি ছিল ওয়ারেন জে হার্ডিং প্রশাসনের একটি বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা। ১৯২১ সালে হার্ডিঞ্জ নৌ তেল সংরক্ষিত এলাকার নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করেন। [পরবর্তীতে অবশ্য সুপ্রিমকোর্ট রুল জারি করে সেটি স্থগিত করেন] হার্ডিঞ্জের সিদ্ধান্তের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি আলবার্ট বি ফলস তার নতুন ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যয় করেন। তিনি ম্যামথ তেল কোম্পানিকে টিপট গম্বুজটির দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে। ঘটনা খুব বেশি দিন চাপা থাকেনি। ১৯২৪ সালেই ঘটনা দুনিয়ার কাছে ফাঁস হয়ে যায়। যদিও এর আগেই হার্ডিঞ্জ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তারপরও অফিস সেটি খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করে এবং কেলেঙ্কারিটি বিশ্বজুড়ে দারুণ আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করে।

ইরান-কন্ট্রা:
১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইরানের কাছে বেশ কিছু অস্ত্র বিক্রি করে এবং তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিকারাগুয়ার কালীন সরকারবিরোধী কন্ট্রা বিদ্রোহীদের কাছে পাচার করে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভর্তি প্রথম বিমানটি ১৯৮৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ইসরায়েলের মাধ্যমে ইরানে পেঁৗছানো হয়। কেলেঙ্কারির কারণে কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা প্রশাসন থেকে বিদায় নেন। তাদের মধ্যে কালীন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ল্যারি স্পিকস, রাজনৈতিক পরিচালক মিথ ড্যানিয়েল, সিআইএ প্রধান উইলিয়াম ক্যাসি, হোয়াইট হাউস কমিউনিকেশন ডিরেক্টর প্যাট্রিক বুচানন, স্টাফ প্রধান ডোনাল্ড রিগ্যান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাকফার্লেনও ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কালীন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান সিনেটর জন টাওয়ার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রদত্ত রিপোর্টে বলা হয়, পদচ্যুত জাতীয় নিরাপত্তা সহকারী অলিভার নর্থ সব পরতার নায়ক ছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান স্বীকার করেন, ইরানে মার্কিন জিম্মিদের মুক্তির বিনিময় তিনি গোপনে চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন। এটি যে ভুল ছিল তা তিনি নিজেই পরবর্তীতে স্বীকার করে নেন।

হুইস্কি রিং:
১৮তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্টের সময়কে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্নীতিপরায়ণ বলে মনে করা হয়। তার শাসনামলে [১৮৬৯-১৮৭৭] মার্কিন ইতিহাসের দুটি বড় ধরনের কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল হুইস্কি রিং স্ক্যান্ডাল। আর এই স্ক্যান্ডালের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্টের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এমনকি তার ব্যক্তিগত সহকারী পর্যন্ত জড়িত ছিলেন। হুইস্কি ডিস্ট্রিলারের মধ্যে কর ফাঁকি ঘুষ গ্রহণের কলঙ্কের ফলে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবিষয়ক সেক্রেটারি উইলিয়াম পদত্যাগে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্টের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এসব কিছু প্রমাণের আগেই তিনি পদত্যাগ করেন।

জেফারসন শেলি:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মতো অতটা আলোচিত রগরগে না হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন শেলি হামিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রথম কোনো যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা। আর ঘটনাটি এমনই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয় যে, সংক্রান্ত গল্প এখনো মানুষ চর্চা করে। ১৮০২ সালে জেফারসনের চাকরানি শেলী তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন একটি সন্তানের পিতৃত্ব রক্ষার দাবি নিয়ে হাজির হন। জেফারসন এসব কিছুই অস্বীকার করেন এবং পরবর্তী বছরের জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় আসীন হন। তখনও নিয়ে বিতর্ক চলছিল। সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৮ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শেলির অভিযোগটি প্রমাণিত হয় এবং জেফারসন শেলির একটি সন্তানের ভরণপোষণে বাধ্য হন।

ক্রেডিট মবিলিয়ার:
কেলেঙ্কারিটিও ১৮তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্টের সময়ের একটি ঘটনা। তার সময়ের অধিকাংশ ঘটনাই ছিল ভয়াবহ দুর্নীতির ঘটনা। আর এসব দুর্নীতির ঘটনার সঙ্গে সরকারের উচ্চ পদের অধিকাংশ কর্মকর্তাই জড়িত থাকতেন। ক্রেডিট মবিলিয়ারের ক্ষেত্রেও ঘটনা অন্যরকম ছিল না এটি ছিল প্রথম বড় ধরনের কেলেঙ্কারি, যা কিনা গৃহযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে তুলেছিল। ১৮৬৭ সালের দিকে উচ্চপদস্থ কিছু রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রেডিট মবিলিয়ার কোম্পানির থেকে কমদামে স্টক কেনে। কোম্পানিটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় রেলপথ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে কংগ্রেসম্যানরা কোম্পানির অনুকূলে ভর্তুকি এবং অন্যান্য বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। এর উদ্দেশ্য ছিল কেবল নিজেদের পকেট ভরা।

 পেট্রিকোট অ্যাফেয়ার:
এটি প্রায় ভুলতে বসা একটি কেলেঙ্কারির ঘটনা, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসনের সময় ঘটেছিল। এর শুরুটা হয়েছিল জ্যাকসনের যুদ্ধবিষয়ক মুখপাত্র জন হেনরি এটনের বিয়ের মাধ্যমে। তিনি মার্গারেট টিম্বারলেক নামে একজন সদ্যবিধবাকে বিয়ে করেছিলেন, যার স্বামী কিছুদিন আগেই আত্দহত্যা করেছেন। বিয়েটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত সোসাইটির একটি বিশেষ দিকের ব্যাপারে সবার আঙ্গুল তাক করে। কারণ জোর গুজব ছিল বিয়ের আগে থেকেই এটনের সঙ্গে টিম্বারলেকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল এবং এই অবৈধ সম্পর্কের কারণেই টিম্বারলেকের স্বামী আত্দহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিয়ে যখন জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে, তখন প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এটনের বিরুদ্ধে চলে যায়। কিন্তু এরপরও এন্ড্রু জ্যাকসন এটনকে সমর্থন দিলে বিতর্কের জন্ম হয় এবং এটনের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এর ফলে পদত্যাগ করেন। জনসন এরপরও এটনকে সমর্থন দিয়ে গেছেন, যেটি ইতিহাসে একটি বিতর্কিত বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। পুরো বিষয়টি পেট্রিকোট অ্যাফেয়ার নামে পরিচিত।

অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের বিয়ে:
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ১৯৭১ সালে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন র্যাচেল ডোনেলসন নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। তার আগেও বিয়ে হয়েছিল এবং ধারণা করা হয়েছিল যে আইনসম্মতভাবে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু জ্যাকসনের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি দেখলেন ঘটনা আসলে তা নয়। র্যাচেলের স্বামী তার স্ত্রীর ব্যভিচারের বিরুদ্ধে আইনগত অভিযোগ উত্থাপন করেন। তখন জ্যাকসন আবিষ্কার করেন র্যাচেলের আইনসম্মতভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়নি। সে ক্ষেত্রে জ্যাকসন র্যাচেলকে বৈধভাবে বিয়ে করার জন্য ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। যদিও এটি ছিল প্রায় ৩০ বছরের পুরনো একটি ঘটনা, এরপরও ১৮২৮ সালের নির্বাচনে ঘটনাটি তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে র্যাচেলের অকাল মৃত্যুর জন্যও অ্যান্ড্রু জনসনকে দায়ী করা হয়।

গ্রোভারের অবৈধ সন্তান:
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতার সময় থেকেই গ্রোভার ক্লেভল্যান্ডকে একটি কলঙ্কের বোঝা মাথায় বয়ে বেড়াতে হয়েছে। পরবর্তীতে প্রকাশ পায় যে মারিয়া সি হপলিন নামের এক বিধবার সঙ্গে গ্রোভার ক্লেভল্যান্ডের সম্পর্ক ছিল এবং তাদের একটি সন্তানও হয়েছিল। মহিলা দাবি করেন ক্লেভল্যান্ডই শিশুটির পিতা এবং তিনি ছেলেটির নাম রেখেছিলেন অস্কার ফুলসোম ক্লেভল্যান্ড। গ্রোভার ক্লেভল্যান্ড অবশ্য শিশুটির পিতৃত্ব অস্বীকার করেননি। শিশুটিকে তিনি একটি এতিমখানায় পাঠিয়ে দেন। পুরো ব্যাপারটিতে ক্লেভল্যান্ডের সততা সত্যবাদিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন মার্কিন নির্বাচনে ক্লেভল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘটনাটিকে ব্যবহার করা হলেও শেষ পর্যন্ত তিনিই বিজয়ী হন।

 উড্রো উইলসনের প্রেম:
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কেলেঙ্কারির যত ঘটনা আছে, তার মধ্যে যৌনবিষয়ক ঘটনা কম ছিল না। কল্যাণমূলক ভাবনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট সমাজবিজ্ঞানী উড্রো উইলসনও কেলেঙ্কারির বাইরে ছিলেন না। তবে তার ক্ষেত্রে বিষয়টি মোটেও যৌন বা এরকম কিছু ছিল না। এটি ছিল কেবলই একটি এনগেজমেন্টের ঘটনা। তার প্রথম স্ত্রী এলেন লুইস অ্যাসন ১৯১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এর পরের বসন্তে উড্রো উইলসনের সঙ্গে এডি গাল্টের দেখা হয় এবং দুজনের মধ্যে একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনকি ধারণা করা হয়, তাদের এনগেজমেন্ট পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে বিতর্কের সূত্রপাত ছিল এখানে যে স্ত্রী থাকাকালীন থেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে সেটাকে শুধু জনসমক্ষে আনা হয়। অনেকের ধারণা, গাল্টকে বিয়ে করার জন্য প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তার প্রথম স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন।

জন এফ কেনেডি:
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়িয়েছে সম্ভবত জন এফ কেনেডির সময়। তার সময়ে ট্যাবলয়েড পত্রিকার গুজবগুলো সম্পর্কে কম-বেশি সবারই জানা আছে। তাকে সব সময়ই নারীঘেঁষা পুরুষ বলে মানা হতো। ১৯৫৩ সালে জ্যাকুলিনকে বিয়ে করার আগ পর্যন্ত কেনেডির গার্লফ্রেন্ডের কোনো লাগাম ছিল না। অবশ্য বিয়ের পরও অন্য নারীর প্রতি কেনেডির দৃষ্টির কোনো পরিবর্তন হলো না। তিনি মহিলাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইতেন এবং তাদের হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণও জানাতেন। তবে তার সময়ে বড় কোনো কেলেঙ্কারির ঘটনা ওইভাবে প্রকাশ না পেলেও তার এই ছোক ছোক স্বভাবের কথা অল্প সময়ের মধ্যেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং আলোচনার জন্ম দেয়।